রানীনগরে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দলিল করার অভিযোগ সাব রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে
নওগাঁর রাণীনগরে লাখ টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জমিসহ বাণিজ্যিক বয়লার রেজিস্ট্রি (দলিল সম্পাদন) করার অভিযোগ উঠেছে সাব রেজিস্ট্রার মো: মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে। দলিল লেখকের সাথে যোগসাজসে অর্থের বিনিময়ে বাণিজ্যিক বয়লার জায়গা ধানী দেখিয়ে এক লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সাব রেজিস্ট্রার দলিলটি সম্পাদন করেছেন। এতে ২০ লাখ টাকা মূলের দলিল থেকে এক লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছেন সরকার। সম্প্রতি রাণীনগর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে এই দলিলটি করা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে আলোচনায় এসেছেন সাব রেজিস্ট্রার মশিউর রহমান ও দলিল লেখক সাদেকুল ইসলাম।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি মাসের ১৩ তারিখে রাণীনগর উপজেলার ঘোষগাঁও মৌজার খতিয়ান নং আরএস ৭৪২, ৩৫৭ ও প্রস্তাবিত ১০৮৩ নং খতিয়ানে সাবেক দাগ নং-৮৩৪, হাল ৬৭৩ দাগে বয়লার ২২ শতাংশ কাতে ১১ শতাংশ ইহার কাতে ৬ শতাংশ বয়লার ২০ লাখ টাকা মূল্যে ধরে রাণীনগর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে একটি বিক্রয় কবলা দলিল সম্পাদন করা হয়। যাহার দলিল নং-২৬৮৬। দলিলের দাতা মো: আল আমিন প্রামানিকসহ চারজন। আর গ্রহীতা মো: আশিকুজ্জামান ও হুমায়ন কবির।
নিয়ম অনুযায়ী- ধানী জায়গা-জমির ক্ষেত্রে বিক্রয় কবলা দলিলের জন্য নগদ রেজিঃ ফিস, পেঅর্ডার রেজিঃ, স্থানীয় কর, উৎস কর, স্ট্রাম্প ও এনএন ফিস আদায় করতে হবে। আর জায়গা-জমিসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বিক্রয় কবলা দলিল হলে রেজিস্ট্রি করার জন্য এফএফ ৫৩- ৩পার্সেন্ট ও ভ্যাট ২পার্সেন্ট সরকারি খাতে রাজস্ব আদায় করতে হবে। কিন্তু ২০ লাখ টাকা মূল্যের এই দলিল থেকে এফএফ ৫৩- ৩পার্সেন্ট ও ভ্যাট ২পার্সেন্ট সরকারি রাজস্বখাতে আদায় করা হয়নি। এক লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বয়লার রেজিস্ট্রি করা হয়েছে।
দলিলের নকল হাতে আসার পর বেড়িয়ে আসে দলিলটির নানা অনিয়মের তথ্য। দলিলটির নকল সূত্রে জানা যায়, দলিলের প্রথম পাতায় শ্রেণী দেখানো হয়েছে ধানী স্থাপনা নেই। আবার দলিলের ৬নম্বর পাতায় শ্রেণী দেখানো হয়েছে বয়লার। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলিলকৃত জায়গাটির শ্রেণী ধানী নয়। বাস্তবে জায়গাটি বয়লার। সেখানে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বয়লার রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, প্রতিনিয়তই রাণীনগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এমন কর্মকান্ড হয়ে আসছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানার পরেও রহস্যজনক কারণে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। তাই দিন দিন অনিয়ম-দুর্নীতির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে এই সাব রেজিস্ট্রি অফিস। দ্রুত এসবের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তাদের।
দলিলের বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে রাণীনগর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক মো: সাদেকুল ইসলাম বলেন, দলিল আমি লিখে দিয়েছি, দলিল অন্য জনার কথা বলেন বলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ফোনটি অন্য এক মুহুরীকে দেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাণীনগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাব রেজিস্ট্রার মো: মশিউর রহমান বলেন, আমার জানা মতে সরকারি রাজস্ব আদায় হবে কিন্তু নেওয়া হয়নি এমন কিছু জানা মতে নেই। আর আপনি যেহেতু বললেন বিষয়টি খতিয়ে দেখে আপনাকে আমি জানাবো।
তিনি বলেন, যেহেতু সেখানে স্থাপনা নেই সেহেতু আমি ওই রাজস্ব আদায় করতে পারি না। এক দলিলে দুই রকম শ্রেণী থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। অপর প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, আমার জানা মতে এই দলিল সম্পাদনে আমি কোন ভুল করেনি। তারপরেও যদি সুনির্দিষ্ট কোনো ভুলের বিষয় থেকে থাকে তাহলে আমাকে দেখতে পারেন আমি নতুন অফিসার সংশোধন হওয়ার চেষ্টা করবো।
এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা রেজিস্ট্রার শরীফ তোরাব হোসেন বলেন, কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।