শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে নওগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের পদত্যাগ
মোহাম্মদ আককাস আলী :
দীর্ঘদিনের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে নওগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. নাজমুল হাসান এবং উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মহিদুল হাসান শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে বৃহস্পতিবার দুপুরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। পদত্যাগপত্রে তারা উল্লেখ করেন, "আমি অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।"
এর আগে সকালে বেলা ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা অধ্যক্ষ নাজমুল হাসানসহ আরও ৭ শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। প্রায় এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ অন্যান্য শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের দ্বারা অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন। শিক্ষার্থীরা তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সোচ্চার হয় এবং তাদের অপসারণের দাবি জানাতে থাকে। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, তারা দুর্নীতিমুক্ত এবং বৈষম্যহীন একটি শিক্ষাব্যবস্থা চায়।
সেনাবাহিনীর একটি দল এসে অধ্যক্ষসহ অন্যান্য শিক্ষকদের উদ্ধার করে। অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার পর মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদত্যাগের ঘোষণা দেন। অন্যদিকে, আন্দোলনের মুখে থাকা বাকি পাঁচজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের তিন দিনের মধ্যে পদত্যাগের আশ্বাস দেন। শিক্ষার্থীরা তাদের বিক্ষোভ চলমান রেখে কলেজে সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচারমূলক পরিবেশের দাবিতে সোচ্চার থাকে।
অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর মধ্যে প্রধানত সরকারি তহবিল আত্মসাতের অভিযোগ ছিল সবচেয়ে গুরুতর। নাজমুল হাসান কলেজের উন্নয়ন প্রকল্প, এডিপি বরাদ্দ, এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণে রাখতেন এবং শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করতেন।
উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মহিদুল হাসানের বিরুদ্ধেও একই ধরনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তিনি সরাসরি রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বে জড়িত ছিলেন এবং নির্বাচনের আগে "জিতবে এবার নৌকা" স্লোগান দিয়ে সরকারি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন। শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে বাধা দেওয়ার জন্য তিনি নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন বলে জানা গেছে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের নেতৃত্বে কলেজে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, এবং শিক্ষার্থীদের উপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করা হয়ে আসছিল। বিভিন্ন তহবিল থেকে অর্থ আত্মসাত, নিয়োগ বাণিজ্য, এবং মাসিক বেতনের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে। প্রতিবাদ করলে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হতো। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নামে এবং শেষপর্যন্ত তাদের পদত্যাগে বাধ্য করেন।
শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবে। কলেজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে এমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারা আরও সচেতন থাকবে বলে জানায় আন্দোলনকারীরা।