Advertisement

দুই কোটি টাকার কৃষিঋণ পেলেন রাণীনগরের প্রান্তিক কৃষকেরা

 

দুই কোটি টাকার কৃষিঋণ পেলেন রাণীনগরের প্রান্তিক কৃষকেরা

‘সহজ শর্তে কৃষি ঋণ, বদলে যাবে সবার দিন" এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে নওগাঁর রাণীনগরে সম্প্রতি শেষ হওয়া কৃষিঋণ মেলার মাধ্যমে কৃষি ও শিল্প বিস্তারের লক্ষ্যে স্বল্প সুদে এক কোটি বিরানব্বই লক্ষ টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। দালালদের খপ্পর এবং হয়রানি ছাড়াই খুব সহজেই কৃষিঋণ পেয়ে খুশি উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক ও উদ্যোক্তারা।


উপজেলার সোনালী, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন, রূপালী ব্যাংক পিএলসি, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ড ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক ও উদ্যোক্তাদের মাঝে এই ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। দুইদিনব্যাপি মেলায় ছয়টি স্টলের মাধ্যমে কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন খাতে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ২৬ লাখ, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) মাধ্যমে ৬০ লাখ, রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে ২১ লাখ, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) মাধ্যমে ২১ লাখ ও পল্লীসঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে ৬৭ লাখ টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলার শতবছরের ঐতিহ্য পাতির তৈরি স্বাস্থ্যবান্ধব মাদুর তৈরির শিল্পকে আরো বেগবান করতে মাদুর বুননের উপর জড়িত কারিগরদের চার লাখ টাকার কৃষিঋণ প্রদান করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমীন।


দালাল ও কোন প্রকারের হয়রানি ছাড়াই এমন কৃষিঋণ পেয়ে উচ্ছ্বসিত উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা। এই ঋণ উপজেলার কৃষিকে এগিয়ে নিতে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


এমন ঋণ প্রদান করায় উপজেলার বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন কুটির ও হস্ত শিল্প নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবে এবং কৃষি খাতকে আরো আধুনিকায়ন ও নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন উপজেলার সচেতন মহল। মেলার সমাপনি দিনে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সুবিধাভোগীদের মাঝে ঋণের চেক হস্তান্তর করেন।


বিআরডিবি থেকে পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ করে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়া উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের আলমগীর হোসেনের স্ত্রী গৃহিণী মোছা. ছামছুন নাহার জানান তিনি প্রথমে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি ছোট্ট ষাড় বাছুর কিনে সেটি লালন-পালন করে ১ বছর পর সেটি ১ লাখ টাকায় বিক্রি করেন।


পরবির্ততে আরো ঋণ নিয়ে একটি গাভী কিনেন। বর্তমানে সেই গাভী থেকে পাওয়া দুধ বিক্রি করে তিনি প্রতিদিন ৪-৫ শত টাকা আয় করছেন। তৃতীয় দফায় তিনি কৃষি ঋণ মেলার মাধ্যমে লক্ষাধিক টাকা ঋণ নিয়ে দুটি ষাড় বাছুর কিনেছেন। এই প্রকল্প থেকে ঋণ নিয়ে তিনি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে আসছেন। এই প্রকল্পটি আগামীতেও চলমান থাকলে তার মতো অনেক গৃহিণী উপকৃত হবেন বলে তিনি মনে করেন।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমীন বলেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল স্যারের নিজস্ব উদ্যোগে জেলা জুড়ে ধারাবাহিকভাবে কৃষিঋণ মেলার আয়োজন করা হয়েছিলো। কৃষকরাও যে খুব সহজেই কোন প্রকারের হয়রানি ছাড়াই কোন কোন ব্যাংক-প্রতিষ্ঠান থেকে স্বল্প সুদে প্রয়োজনে কৃষিঋণ পেতে পারেন সেই বার্তাটি প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের মাঝে পৌছে দিতেই মূলত এমন মেলার আয়োজন করা।


উপজেলার কৃষি, প্রায় বিলুপ্ত হওয়া ক্ষুদ্র হস্ত এবং কুঠির শিল্পকে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য এই পেশাগুলোর সঙ্গে জড়িত কারিগরদের আর্থিক ভাবে সহযোগিতা প্রদান করার কোন বিকল্প নেই।


তিনি আরো বলেন বিগত কয়েক বছর যাবত বিভিন্ন পণ্য তৈরির উপকরণগুলোর দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই এই সব পেশা বদলে চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়। আবার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা তাদের প্রয়োজনে সময়মতো ঋণ না পাওয়ার কারণে স্থানীয় বিভিন্ন এনজিও এবং দাদন ব্যবসায়ীদের দ্বারস্থ হয়ে উচ্চসুদে ঋণ নেওয়ার কারণে ফসল উৎপাদনের লভাংশটি দিয়ে আসছেন অপরের ঘরে।


এমনই সব সমস্যা থেকে কৃষকদের মুক্ত করতে, নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও স্থানীয় ক্ষুদ্র শিল্পকে টিকে রাখার প্রত্যয় নিয়ে এমন কৃষিঋণ মেলার আয়োজন করা। প্রতিবছর যদি এই মেলার আয়োজন করা হয় তাহলে ধীরে ধীরে উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের প্রান্তিক কৃষকসহ অন্যরা ঋণ গ্রহণের বিষয়ে অনেক সচেতন হয়ে উঠবেন। ফলে সুবিধাভোগীরা দালাল ও দাদন ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন এবং দ্রুতই আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে উঠবেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now